Published On Jun 13, 2024
যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া স্টেটের স্কুলশিক্ষক ‘জেন এলিয়ট’ তার ছাত্র-ছাত্রীদের বর্ণবাদ, বৈষম্য’ এই ব্যাপারগুলো বোঝাতে চেষ্টা করেন। কিন্তু তা কিছুতেই ফলপ্রসূ হচ্ছিলো না। শহরের শিক্ষার্থীরা মফস্বল শিক্ষার্থীদের এবং শ্বেতাঙ্গ শিক্ষার্থীরা কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থীদের অবজ্ঞার চোখেই দেখে যাচ্ছিল।
এলিয়ট তার শিক্ষার্থীদের উপর দুইমাসব্যাপী একটি এক্সপেরিমেন্ট চালালেন। প্রথমে তিনি তার ক্লাসের ২৬৮ছাত্র-ছাত্রীকে দুটি গ্রুপে ভাগ করলেন। প্রথম গ্রুপে রাখলেন যাদের চোখের রং নীল এবং দ্বিতীয় গ্রুপে রাখলেন যাদের চোখের রং বাদামী।
তিনি প্রথম গ্রুপ অর্থাৎ যাদের চোখের রঙ নীল তাদেরকে বাদামী চোখের শিক্ষার্থীদের চেয়ে উঁচু মর্যাদার বলে ধরে নিলেন এবং বেশি সুযোগ-সুবিধা দিতে শুরু করলেন। দ্বিতীয় গ্রুপের সদস্যদের কোণঠাসা করার জন্য তিনি তাদের বিভিন্ন দোষ-গ্রুটি সবার সামনে বর্ণনা করতে লাগলেন।
এর ফলাফল হলো খুবই চমকপ্রদ। প্রথম গ্রুপের শিক্ষার্থীরা অর্থাৎ যারা নিজেদেরকে সুপিরিয়র ভাবছে, তাদের আচরণ খুব গ্রুপের পরিবর্তিত হতে লাগল। তারা ক্লাসে এখন সবচেয়ে বেশি মনোযোগী এবং কোনো কিছু না বুঝলে তারা সাথে সাথে প্রশ্ন করে। ক্লাস টেস্টেও তারা দ্বিতীয় গ্রুপের সদস্যদের চেয়ে অনেক ভাল করলো। সবথেকে মন খারাপ করা যে ব্যাপারটা ঘটল তা হলো, তারা তাদের দ্বিতীয় গ্রুপের বন্ধুদের সাথে খারাপ ব্যবহার করতে শুরু করল এবং তাদের উপর এক ধরনের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করতে লাগল। অন্যদিকে দ্বিতীয় গ্রুপের শিক্ষার্থীরা হীনম্মন্যতায় ভুগতে থাকলো এবং সবদিক থেকে পিছিয়ে পড়তে লাগল।
পরের মাসে ‘এলিয়ট’ গ্রুপ ঠিক রেখে একই এক্সপেরিমেন্ট চালালেন। কিন্তু এবার যাদের চোখের রঙ বাদামী তাদেরকে নীল চোখের শিক্ষার্থীদের চেয়ে সুপিরিয়র হিসেবে ধরে নিয়ে অনুপ্রেরণা দিতে লাগলেন। তখন ফলাফলও উল্টে গেল। অর্থাৎ নীল চোখ যাদের তারা সবকিছুতে পিছিয়ে পড়তে লাগল।
এই এক্সপেরিমেন্টটি খুবই আলোচিত হয়। পরীক্ষাটি করার সময়কার ভিডিওগুলো নিয়ে ২৫ মিনিটের একটি ডকুমেন্টারি তৈরি করা হয়, যার নাম । এছাড়া - নামে আরও একটি ডকুমেন্টারি আছে একই বিষয়ের উপর।
এই এক্সপেরিমেন্টটির মাধ্যমে আমরা বুঝতে সক্ষম হয়েছি যে, সমাজে যারা অবহেলিত তারা কেন পিছিয়ে পড়ে এবং নানা অপরাধের সাথে যুক্ত হয়। আর যারা সুপার পাওয়ার হয়, তারা কিসের জোরে দুনিয়াটা শাসন করে। পরিবারে বা সমাজে যদি কাউকে সমালোচনা বা অবহেলা কিংবা দমিয়ে রাখা হয়, তাহলে তার পক্ষে পাওয়ার হিসাবে গড়ে উঠা খুবই কঠিন, পক্ষান্তরে যদি কাউকে প্রশংসা ও উৎসাহিত করা হয়, তাহলে তাকে অনেকদূর নিয়ে যাওয়া সম্ভব। পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষই সম্ভাবনাময়, শুধু দরকার তার ভিতরের ঘুমন্ত শক্তিকে জাগিয়ে তোলা। নিজের পরিবার, সন্তান বা কর্মচারী কিংবা অন্য কেউ থাকলে , সর্বদা তাদেরকে প্রশংসা ও উৎসাহের মধ্যে রাখুন, দেখবেন সে সত্যিই জ্বলে উঠবে এবং তার কারণে আপনি বেশি সুখী হবেন।
আর সন্তানকে কড়া শাসনে রাখার ফল ভালো হওয়ার বদলে উল্টো বখাটে হয়ে যায়। সন্তানকে মিথ্যা বলায় পটু করে তুলে। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। উদ্ধত আচরণ করে। আত্মবিশ্বাসের অভাব তৈরি হয়। ফলে জীবনে প্রতি পদক্ষেপে তাদের হোঁচট খেতে হয়।
#education #motivational #bangla