রাজা লক্ষ্মণ সেনের প্রাসাদের সন্ধানে || Raja Lakshmana Sen's palace || Bangladesh Tour-5.
Manas Bangla Manas Bangla
377K subscribers
17,921 views
615

 Published On Aug 24, 2024

মাত্র ১৭ জন অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে ১২০৪ খ্রিষ্টাব্দে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী নদীয়ার রাজা লক্ষণ সেনকে পরাজিত করে বাংলা জয় করেন”- ইতিহাসের বইয়ের এই লাইনটি নিশ্চয় সবার মুখস্ত। যদিও এর আগের বা পরের কোনো কিছুই আমাদের ঠিকমতো জানা নেই। বখতিয়ার খিলজী নদিয়া বিজয় করেছিলেন তা যেমন ঐতিহাসিক সত্য কিন্তু সে নদিয়া কোথায় এবং কোন পথে বিজিত হয়েছিল তার ঐতিহাসিক ও ভৌগলিক বিবরণ সঠিক ভাবে জানা যায় না। সেদিন বক্তিয়ার কজিলজির কবর দেখার পর মনের ভিতর অদম্য একটা ইচ্ছে জেগেছিল যে রাজা লক্ষণ সেনকে পরাজিত করে বক্তিয়ার বাংলা বিজয় করেছিলেন সেই নওদীহ বা নদীয়া কোথায় অবস্থিত কারণ ঐতিহাসিক মিনহাজের উল্লেখিত নদীয়ার অবস্থান হবে গঙ্গা, মহানন্দা ও করতোয়ার মধ্যবর্তী এলাকায়। অন্যথায় তৎকালীন মালদহ জেলার কোন এক স্থানে। তাদের মতে নওদা, নুদীয়া বা নোদিয়াহ্ এ সমস্ত নামের যেটিই হোক না কেন, নামের এই পরিবর্তন সম্পূর্ণরূপে তুর্কি বিজয়ের পর হয়েছে। কাজেই নোদিয়হ্ শহরই যে আজকের নওদা তা অনেক ঐতিহাসিকই সমর্থন করেছেন। মিনহাজের বর্ণনায় আরো দেখা যায়, নওদীয়হ নগরীতে নগরদ্বার ছিল, অর্থাৎ শহরটি সুরক্ষিত ছিল। রাজার বসবাসের জন্য রাজপ্রাসাদ ছিল। কিন্তু সেই আমলের কোন প্রত্ননিদর্শন যেমন রাজপ্রাসাদ, নগরপ্রাচীর, নগরদ্বার, উপাসনা মন্দির, দুর্গ ইত্যাদির কোন চিহ্ন বা ধ্বংসাবশেষ আজ পর্যন্ত উদ্ধার হয়নি নবদ্বীপ অঞ্চল থেকে। এমনকি নবদ্বীপে সেন আমলে নির্মিত কোন মন্দির, প্রাসাদ, দুর্গ, বা কোন প্রতিরক্ষা প্রাচীর অথবা শহরের সীমান্তে খনিত পরিখা ইত্যাদির কোন ধ্বংসাবশেষ বা চিহ্ন পাওয়া যায়নি। রাজা যেখানে অবস্থান করবেন সেই স্থানটিতে সুরক্ষিত প্রাসাদ, সৈন্যবাহিনীর অবস্থানের জন্য দুর্গ ও সেনানিবাসসহ আনুসঙ্গিক আরো অনেক পাকা স্থাপনা থাকার কথা। কিন্তু নবদ্বীপ শহরে এগুলোর কোন ধ্বংসাবশেষ আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। বন্ধুরা এবার আমাদের গন্তব্য বাংলাদেশের চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর। এখানকার নওদা বুরুজকে অনেকেই মনে করেন এটাই ছিল রাজা লক্ষন সেনের প্রাসাদ। এই এলাকার উত্তর ও পূর্ব দিকে আছে প্রায় মজে যাওয়া পরিখা। এর লাগোয়া দক্ষিণেই আছে প্রশস্থ ও গভীর নিম্নভূমি। অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন এ নিম্নজলাভূমিই ছিল দূর অতীতে পুণর্ভবা নদীর পরিত্যক্ত খাত । পুণর্ভবা নদী বর্তমানে প্রায় দেড় কিঃ মিঃ পশ্চিম দিকে সরে গেছে। নওদা বুরুজটির মাটি থেকে উচ্চতা প্রায় ৫০ ফুট। খালি চোখে দেখলে সহজে বুঝা যায় যে, এতে মন্দির বা স্তুপ জাতীয় কোন অট্টালিকার ধ্বংসাবশেষ লুকিয়ে আছে। এইস্থানের বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ছোট বড় নানান ঢিবি যা কোনো একসময় কোনো স্থাপনার ছিল তা বলাই যেতে পারে যদিও নিয়মিত ইট, পাথর হরণকারীদের দৌরাত্মে তা ক্ষয়প্রাপ্ত। সুষ্ঠু পরিকল্পনা ছাড়াই নানা সময় এ নওদা বুরুজে খনন কার্য চালানো হয়েছিল। ১৯৬৪ খ্রীঃ তৎকালীন নবাবগঞ্জ মহকুমা প্রশাসক এ স্থান থেকে বেশ কিছু প্রত্ন নিদর্শন সংগ্রহ করেছিলেন। বুরুজের একটি অংশ খননের পর একটি দরজা পাওয়া যায়। দরজার ভিতর অংশ খনন করে একটি বৌদ্ধ মূর্তি, একটি গণেশ মূর্তি এবং বেশ কিছু মুদ্রা পাওয়া গিয়েছিল যদিও বর্তমানে সেই সব নিদর্শনগুলি কোথায় তা জানা যায় না। এছাড়াও এই এলাকা থেকে বহু পূর্বে বিষ্ণু, সূর্য ও শিব প্রভৃতি দেব দেবীর মূর্তিও আবিষ্কৃত হয়েছে বলে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়। মৃৎশিল্পের অসংখ্য নিদর্শন, অলংকৃত ইট, বিচিত্র নকশাযুক্ত পোড়া মাটির ভাস্কর্য্যও পাওয়া গেছে প্রচুর। নওদা বুরুজ থেকে উদ্ধারকৃত হিন্দু দেব দেবী মূর্তির একচেটিয়া আধিক্য দেখে ধারনা করা যেতেই পারে যে, এক সময়ে (খুব সম্ভব একাদশ-দ্বাদশ শতাব্দীতে) এই স্থানে হিন্দু ধর্ম ও সংস্কৃতির যথেষ্ঠ প্রাধান্য ছিল। রাজা লক্ষ্মণ সেন যৌবনে বীর ও দক্ষ যোদ্ধা এবং ব্যক্তিগতভাবে প্রজাবৎসল ছিলেন। কিন্তু পূর্ব থেকে চলে আসা রাজনৈতিক ও সামাজিক অধঃপতন তিনি রোধ করতে পারেননি। প্রজা সাধারণ যেমন সেনশাসনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছিল তেমনি শাসনক্ষমতার ভিতরেও ঘুন ঢুকে তাকে রাজার অজ্ঞাতেই তা ধ্বসে পড়ার অপেক্ষায় ছিল। লক্ষ্মণ সেনের শাসনকালের যতো মহিমা তার সবখানিই ম্লান হয়ে যায় রাজার দুর্ভাগ্যজনক পরিণতির কারণে।
#নওদা_বুরুজ
#রাজা_লক্ষণ_সেন

ব্যক্তিগত মতামত ও পরামর্শ দেওয়ার জন্য নিচের মেইল আইডি তে মেইল করুন। [email protected]

Stay Connected with me on Social Network :
Twitter :   / manasbangla  
Facebook :   / manasbangla  
Instagram :  / manasbangla  

show more

Share/Embed